সোমবার, জুলাই ৭, ২০২৫
No menu items!
spot_img

সমন্বিত খামারে খুঁজে পেয়েছেন সফলতা, মাসে আয় লাখ টাকা

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার গুলিসাখালি ইউনিয়নের বাসিন্দা মুজাহিদুর রহমান তমাল। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্যেই করেছেন ডিগ্রি পাস। তবে চাকরির পেছনে না ছুটে হয়েছেন উদ্যোক্তা। ছিল না কোনো কাজের অভিজ্ঞতাও। বাবার দেওয়া জমি আর স্ত্রীর দেওয়া লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে সমন্বিত খামার শুরু করে খুঁজে পেয়েছেন সফলতা।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত তমালের সমন্বিত খামারটি ঘুরে দেখার পর মুগ্ধ হতে হয় তার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পে। ২০১৪ সালে স্ত্রীর দেওয়া ১ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে হাঁস পালনের খামার শুরু করেন। ধীরে ধীরে বাড়িয়েছেন খামারের পরিধিও। এখন পাঁচশতাধিক ‘খাকি ক্যাম্পবেল’ জাতের হাঁস, ৯টি পুকুরে মাছ, ২৫টি বিভিন্ন জাতের ছাগল, ১ হাজার লেয়ার মুরগি ও পাঁচ শতাধিক দেশি মুরগি রয়েছে তার খামারে। সমন্বিত খামার করে ১০ বছরের ব্যবধানে তার এখন মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। বাবার দেওয়া ৬ বিঘা জমিতে শুরু করে এখন ২৪ বিঘার খামার তার।

মুজাহিদুর রহমান তমাল বলেন, ২০১৪ সালে স্ত্রীর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ৮০০টি খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের বাচ্চা এনে খামার শুরু করি। কিন্তু শুরু কারার তিন দিনের মাথায় সবগুলো হাঁসের বাচ্চা মারা যায়। দমে যাইনি, আবার শুরু করি। মূলত প্রথমে মাছ চাষের ইচ্ছে থাকলেও খাবারের দামের কথা চিন্তা করে হাঁস পালন শুরু করি হাঁস বিষ্ঠা এখন মাছের খাবার। বর্তমানে ৫ শতাধিক পূর্ণ বয়সী হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৩৭০টি করে ডিম দিচ্ছে। ডিমের দাম ১৫ টাকা পিস। প্রতিদিন ডিম বিক্রি করেই পাঁচ হাজার ২৫০ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে খরচ রয়েছে ২ হাজার টাকা। এটি ওষুধের পেছনে ব্যয় হয়। প্রতি মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হয়। লাভের টাকা দিয়ে সাতজনের সংসার চালানোর পাশাপাশি প্রতি বছর হাঁসের সংখ্যা বাড়াতে পারছি।

তিনি আরও বলেন, ১০ বছর ধরে শ্রম আর ধৈর্যের সঙ্গে হাঁসের খামার করছি। ব্যয় বাদ দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে সংসার চলছে। হাঁস পালন করে এখন আমি সফল ও স্বাবলম্বী। মা-বাবার পাশাপাশি স্ত্রী রুমা আক্তার তাকে এই পর্যায়ে আনতে সহায়তা করেছেন বলে জানান তিনি।

খামারে হাঁসগুলোর পরিচর্যা করছিলেন রাকিব তালুকদার। তিনি বলেন, হাঁসগুলোর নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। খাওয়াতে হয় ফিড ও পানি। সকালে ৪০ কেজি বিকালে ৪০ কেজি মোট ৮০ কেজি খাবার দিতে হয়। সকাল ৭টার দিকে হাঁসগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশে পুকুর রয়েছে। সেখানেই সারাদিন কাটায় তারা। এরপর মুরগির খাবার দেওয়া, মাছের খাবার দেওয়া, ছাগলের পরিচর্যা, হাঁসের ডিম সংগ্রহসহ অনেক কাজ থাকে আমার।

প্যারাগন গ্রুপের টেকনিক্যাল সার্ভিস অফিসার ডা. আলহাজ মোল্লা বলেন, শীতকালে হাঁসের বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে আমরা ওষুধ দিয়ে থাকি। পাশাপাশি আমরা তমাল ভাইকে সঠিকভাবে লালন-পালনে দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকি। তা ছাড়া হাঁসগুলো খুব সুন্দর দেখতে। অনেকে এখান থেকে হাঁসের ডিম কিনে নিয়ে যান। অনেকে আসেন দেখার জন্য।

মঠবাড়িয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন, আমাদের এ অঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টি হাঁসের খামার ও ২৬টি লেয়ার খামার রয়েছে। সবাই আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। আমরাও তাদের পাশে আছি। খামারি তমাল যদিও প্রথমবারে ৮০০ হাঁস দিয়ে খামার শুরু করতে চেয়েছিলেন দুর্ভাগ্য তিন দিনের মাথায় সবগুলো হাঁস মারা যায়। আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়ান। শুরু করেন সমন্বিত খামার। হাঁস থেকে এখন প্রতিদিন ৩৭০টি ডিম আসছে। তমাল ভাইয়ের মতো যারা হাঁস ও লেয়ার পালন করতে চায় আমরা তাদের পাশে আছি।

তিনি আরও বলেন, খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস মাংস উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এখানকার খামারিরা মাংস ও ডিম উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। এ জাতের হাঁস দ্রুত বর্ধনশীল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ হাঁসের চাহিদাও রয়েছে বেশ। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে যে কেউ এ ধরনের খামার গড়ে তুলে সচ্ছল হতে পারেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের ডাক প্লেগ ভ্যাকসিনসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular