ভোলার চরফ্যাশনে চিকিৎসায় অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে আঁখি আক্তার নামে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
সোমবার (৬ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজাননির পর জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার বিকেল ৪টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার করিমজান মহিলা মাদ্রাসা রোডে অবস্থিত ব্যক্তি মালিকানাধীন ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নবজাতকটির মৃত্যু হয়।
নবজাতকের পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো.বাবুল তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে নিয়ে সোমবা সকালে উপজেলা শহরের মেঘনা ল্যাব এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসক ডা. আঁখি আক্তারের কাছে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ওই চিকিৎসক একই মালিকানাধীন ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হতে বললে দুপুরের দিকে অন্তঃস্বত্ত্বা তাছলিমা বেগমকে শহরের ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিকে ভর্তি করানো হয়।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী মো. বাবুল অভিযোগ করে বলেন, আমার স্ত্রী গর্ভধারনের পর থেকে নিয়মিত ডা. আঁখি আক্তারের চিকিৎসা নিয়েছেন। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসায় গতকাল আমার স্ত্রীকে ফের ডা. আঁখির কাছে মেঘনা ডায়াগনস্টিকে নিলে তার পরামর্শে আমার স্ত্রীকে ইকরা ডায়াগনস্টিকে ভর্তি করেছি। ডাক্তার ওষুধ লিখে রক্ত আনতে বলেন, আমি সব প্রস্তুতি গ্রহণ করি, কিন্তু তিনি একবারও এসে আমার স্ত্রীর খোঁজ নেননি। অপারেশন থিয়েটারে একজন নার্স এবং আয়াকে দিয়ে নরমাল ডেলিভারির পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর আমাকে জানানো হয় মৃত বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। পরে দেখি নবজাতকের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, ডাক্তার যদি আগেই বলতেন যে নরমাল ডেলিভারি সম্ভব নয়, তাহলে আমি সিজারিয়ান অপারেশন করাতাম বা অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতাম। ডাক্তার আঁখির অবহেলার কারণে আমাদের সন্তান মারা গেছে, আমি এর বিচার চাই।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ডা. আঁখি আক্তারের ব্যবহৃত মোবাইলে কল দিলে তিনি কল রিসিভ করেননি। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক কুলসুম আক্তার পলির সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তিনি মোবাইলের কল কেটে দেন। পরে আর কল ধরেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মু. মনিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখনো পর্যন্ত ভুক্তভোগী পরিবারের লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০২৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর চরফ্যাশন হাসপাতাল রোডে অবস্থিত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসক ডা. আঁখি আক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমিনাবাদ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আনোয়ার হোসেনের মেয়ে মুন্নী আক্তার নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে আত্নগোপনে চলে যান এই চিকিৎসক। পরবর্তীতে পুনরায় অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে ইকরা হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিকে যোগদান করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে শুরু করেন।